রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে মঙ্গলবার সকালে ভয়াবহ এক বিস্ফোরণে নিহত হন শীর্ষস্থানীয় রুশ সামরিক কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইগর কিরিলভ। শহরের একটি আবাসিক ভবনে প্রবেশ করার সময় স্কুটারে লুকানো বোমা বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিনি এবং তার এক সহযোগী।
রাশিয়ার নিউক্লিয়ার, বায়োলজিক্যাল অ্যান্ড কেমিক্যাল প্রোটেকশন ট্রুপস বাহিনীর প্রধান ছিলেন কিরিলভ। রুশ তদন্তকারী সংস্থা ইনভেস্টিগেটিভ কমিটির মতে, স্কুটারে রাখা বোমায় বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এতে ভবনের প্রবেশপথ পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম তাসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিস্ফোরণে ব্যবহৃত বিস্ফোরকের পরিমাণ ২০১০ সালে মস্কোর মেট্রোতে আত্মঘাতী হামলায় ব্যবহৃত বিস্ফোরকের সমান। সে হামলায় অন্তত ৪০ জন নিহত এবং ৮০ জন আহত হয়েছিলেন।
ইউক্রেনের দায় স্বীকার ও যুক্তি
ইউক্রেনের সিকিউরিটি সার্ভিস (এসবিইউ) এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে। কিয়েভের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কিরিলভ ইউক্রেন যুদ্ধে নিষিদ্ধ রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাই তিনি বৈধ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছিলেন। এসবিইউর দাবি, এটি তাদের একটি ‘বিশেষ অভিযান’। তারা অভিযোগ করেছে, কিরিলভের নির্দেশে ইউক্রেনীয় বাহিনীর ওপর বিষাক্ত ক্লোরোপিকরিন গ্যাস ব্যবহার করা হয়েছে। ২০২২ সালের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র এই রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগে কিরিলভের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
কিরিলভের অতীত এবং নিষেধাজ্ঞার ইতিহাস
২০১৭ সাল থেকে রাশিয়ার পারমাণবিক প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান ছিলেন কিরিলভ। এর আগে তিনি জার্মানিতে সোভিয়েত ওয়েস্টার্ন গ্রুপ অব ফোর্সেসের প্লাটুন কমান্ডার ছিলেন। যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং নিউজিল্যান্ডসহ একাধিক দেশ কিরিলভের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। যুক্তরাজ্যের মতে, কিরিলভ ক্রেমলিনের অপতথ্য ছড়ানোর কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা কিরিলভকে ‘রাশিয়ার জন্য নির্ভীক যোদ্ধা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। রুশ পার্লামেন্টের প্রতিরক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান আন্দ্রেই কারতাপোলভ তাকে ‘সম্মানিত রুশ জেনারেল’ বলে উল্লেখ করেছেন।
রাশিয়ার পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের ডেপুটি স্পিকার কনস্তানতিন কোসাচেভ দাবি করেছেন, কিরিলভ ইউক্রেনসহ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দেশগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের জৈব গবেষণাগারের কার্যক্রম উন্মোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তার নেতৃত্বে এ বিষয়ে তদন্তের জন্য বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি কমিশনও গঠন করা হয়েছিল।
কিরিলভ যুদ্ধক্ষেত্রের বাইরে নিহত সর্বোচ্চ পদমর্যাদার রুশ সামরিক কর্মকর্তা। এর আগে, ২০২২ সালের নভেম্বরে ক্রিমিয়ায় গাড়িবোমা বিস্ফোরণে নিহত হন কৃষ্ণসাগর বহরের ৪১তম ব্রিগেডের কমান্ডার ক্যাপ্টেন ভ্যালেরি ত্রাঙ্কোভস্কি।
এ ছাড়া সম্প্রতি মস্কোয় এক রুশ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র প্রকৌশলীকে হত্যা করা হয়, যিনি ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়নে সহায়তা করতেন। এসব ঘটনাতেও ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থা এসবিইউয়ের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ইগর কিরিলভের মৃত্যু শুধু রাশিয়াতেই নয়, বিশ্ব রাজনীতিতেও আলোড়ন তুলেছে। এ ঘটনায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি ফেরেছে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের জটিল ও উত্তপ্ত পরিস্থিতির দিকে।