উত্তরের জনপদ নওগাঁয় গত তিন দিন ধরে দেখা মিলছে না সূর্যের দেখা। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে এই অঞ্চলের মানুষের জনজীবন। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষগুলো। গত তিন দিনে ঘন কুয়াশার কারণে সড়ক দুর্ঘটনায় ছয়জন নিহত হয়েছেন।
ঘন কুয়াশায় ঢেকে আছে চারপাশ। রাস্তাঘাট ছিল প্রায় জনশূন্য। যারা জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হয়েছেন তাদের অনেকেই শীতের কারণে বিপাকে পড়েছেন। বিশেষ করে ভ্যানচালক, রিকশাচালক, মোটরসাইকেল বা সাইকেলে চলাচল করেন তাদের জন্য কুয়াশা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শহর থেকে শুরু করে গ্রাম অঞ্চলের সড়কগুলোতে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। ঘন কুয়াশার কারণে ঘটছে দুর্ঘটনাও।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। বৃষ্টির মতো ঝরা শিশিরের সঙ্গে হিমেল হাওয়া আর কনকনে ঠান্ডায় জবুথবু এ জেলার মানুষ। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে নওগাঁ পৌরসভার উকিলপাড়া, তাজের মোড়, বিহারীকলোনী এলাকায় দেখা যায়, চারদিক ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে আছে। রাস্তায় চলাচলকারী মানুষের সংখ্যা খুবই কম। কয়েকটি গাড়ি হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছিল।
হঠাৎ ঘন কুয়াশা ও শীতের তীব্রতা বাড়ায় নিম্নআয়ের মানুষেরা বিপাকে পড়েছেন। রোদ না উঠায় শহরে মানুষের আনাগোনাও কমেছে। যারা বের হয়েছেন, তারা মোটা ও গরম কাপড় জড়িয়ে বাইরে এসেছেন।
শহরের তাজের মোড় লিটন ব্রিজের পূর্বপাশে যমুনা হোটেলের সামনে প্রতিদিন বসে শ্রম কেনাবেচার হাট। সেখানে দিনমজুরেরা কাজের আশায় অপেক্ষা করেন। সকালে সেখানে কয়েকজন দিনমজুরের সঙ্গে কথা হয়। আলিম নামের এক দিনমজুর বলেন, সারাদিন সূর্যের দেখা নাই। মালিকেরা কাজকাম করাচ্ছে না। সপ্তাহের প্রতিদিন কামই পাওয়া যায় না। যতই ঠান্ডা হোক, প্যাটের তাগিদে হামাগের কাম করাই লাগবে। কিন্তু কামই তো পাচ্ছি না।
ঘন কুয়াশা ও ঠান্ডার তীব্রতার কারণে সড়কে ঠিকমতো ভ্যান চালাতে পারছেন না স্থানীয় বাসিন্দা মতিন। তিনি বলেন, সূর্যের দেখাই নাই। কুয়াশার কারণে রাস্তা ঠিকমতো দেখা যাচ্ছে না। বড় গাড়ি সামনে থেকে লাইট দিলে তো আরও কিছু দেখা যাচ্ছে না।
শহরের উকিলপাড়া এলাকায় টিফিন রেস্টুরেন্টের মালিক জিয়াউল হক শুভ বলেন, শীতের কারণে মানুষ ঘর থেকে বেরই হচ্ছে না। হোটেলে খাওয়ার লোকজন নেই। দিনে ১০ হাজার টাকারও বেচাবিক্রি নেই।
নওগাঁর বদলগাছী কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, জেলায় ঘন কুয়াশার সঙ্গে হালকা বাতাস বইছে। এ কারণে শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে। ঘন কুয়াশা ও হিমেল বাতাসের কারণে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান কমে আসছে। সূর্যের দেখা না মেলায় রাতের পাশাপাশি দিনেও শীতের তীব্রতা অনুভূত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।