তিনি বলেছেন, ষড়যন্ত্র থেমে যায়নি। আপনারা নিশ্চয়ই গত কয়েকদিনের পত্রিকার বিভিন্ন খবর সম্বন্ধে অবগত। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, আপনারা প্রত্যেকে পোড় খাওয়া মানুষ। কাজেই আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে সক্ষম হচ্ছেন যে, কোথাও কিছু একটা ষড়যন্ত্র চলছে। কাজেই জনগণকে সচেতন করতে হবে। জনগণের সঙ্গে থাকতে হবে।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ শীর্ষক কর্মশালায় সমাপনী বক্তব্যে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় তার নামের সঙ্গে ‘দেশনায়ক বা রাষ্ট্রনায়ক’ জাতীয় শব্দ ব্যবহার না করতে দলের নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছেন তারেক রহমান।
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, ‘সহকর্মী হিসেবে আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ এবং নেতা হিসেবে আপনাদের কাছে নির্দেশ, আজকের পর থেকে দয়া করে আমার নাম যখন কেউ বলবেন, দেশনায়ক, রাষ্ট্রনায়ক এই কথাগুলো কেউ ব্যবহার করবেন না।’
তিনি বলেন, বিএনপি এমন একটি দল, যারা অতীতে দেশের উন্নয়নের জন্য, মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নের জন্য কাজ করেছে। অনেক ক্ষেত্রেই সফল হয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে হয়নি। আমরা সবাই জানি, অনেকেই বলেছেন, বাংলাদেশে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে, দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারলে, জনগণের চাওয়া অনুযায়ী কাজ করতে পারলে আগামী দিনে বিএনপিই সরকার গঠন করবে।
তারেক রহমান আরও বলেন, এটা নির্ভর করছে দলের নেতাকর্মীদের ওপর। আমাদের এই ৩১ দফা হলো ভবিষ্যতে আমরা কীভাবে দেশ পরিচালনা করব, তার রূপরেখা। এটা প্রথমে ছিল ২৭ দফা। পরে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে আমাদের যুগপৎ আন্দোলনে যেসব শরিক দল ছিল, তাদের সবার মতামতের ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে। অর্থাৎ, এটা শুধু বিএনপির নয়, গণতন্ত্রে বিশ্বাসী সব দলের সম্মিলিত চিন্তার ফসল।
তিনি বলেন, অনেকেই অনেক সংস্কারের কথা বলছেন। বিএনপির পক্ষ থেকে দেশ-জাতি নিয়ে চিন্তা বহু আগে থেকে করছি। যখন কেউ চিন্তাই করেনি, সে সময় দেশের মানুষের সামনে ২৭ দফা ও পরে ৩১ দফা উপস্থাপন করেছে। আমরা বারবার বলেছি, ভালো প্রস্তাবনা এলে ৩১ দফার সঙ্গে গ্রহণ করা যাবে।
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, এই ৩১ দফাকে দেশের মানুষের কাছে নিয়ে যেতে হবে। জনসভা করে নয়, ছোট ছোট উঠান বৈঠক করে গ্রামে গ্রামে, ইউনিয়নে ইউনিয়নে গিয়ে মানুষকে জানাতে হবে। আমি কয়েকদিন আগে এক বক্তব্যে বলেছিলাম, জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তি না হলে যেই সংস্কার করি না কেন, সেটা কাজে লাগবে না।
তিনি আরও বলেন, জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। এর জন্য ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। পৃথিবীর যে কোনো গণতান্ত্রিক দেশে ভোটের মাধ্যমে জবাবদিহি তৈরি হয়।
তারেক রহমান বলেন, জনগণের কথা বলার অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, ভোট প্রদানের অধিকারের জন্য আমাদের হাজারো সহকর্মী গুম হয়েছেন, খুন হয়েছেন। ৬০ লাখের বেশি মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছেন আমাদের নেতাকর্মীরা। আমরা এই যুদ্ধ করছি বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার, কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য। কাজেই আমাদের যে কোনো মূল্যে এই অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে জনগণকে সচেতন করার মাধ্যমে। তাই আমরা একটি কথা বলছি, ষড়যন্ত্র থেমে যায়নি। আপনারা নিশ্চয় গত কয়েকদিনের পত্রিকার বিভিন্ন খবর সম্বন্ধে অবগত। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, আপনারা পোড় খাওয়া প্রতিটি মানুষ। কাজেই আপনারা নিশ্চয় বুঝতে সক্ষম হচ্ছেন যে, কোথাও কিছু একটা ষড়যন্ত্র চলছে। কাজেই জনগণকে সচেতন করতে হবে। জনগণের সঙ্গে থাকতে হবে।
এর আগে সকালে কর্মশালার উদ্বোধন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান। এতে আরও বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, যুগ্ম মহাসচিব শহীদউদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, আব্দুস সালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় নেতা কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, এবিএম মোশাররফ হোসেন, রাশেদা বেগম হীরা, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, বেনজীর আহমেদ টিটো, দলের মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল প্রমুখ।