মুন্নিকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় বলে অভিযুক্ত মানিক আলী মুন্সি (২২) ও তার চাচাতো ভাই পারভেজ মহসিন স্বপন (১৯) স্বীকার করেছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে অভিযুক্তরা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে। গ্রেফতার দুইজন আপন চাচাতো ভাই। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় অভিযুক্ত দুইজনকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ আদালতে হাজির করে।
জবানবন্দি শেষে পুলিশ প্রহরায় ওই দুজনকে চুয়াডাঙ্গা জেলা কারাগারে নেওয়া হয়। গ্রেফতারকৃত মানিক আলী মুন্সি চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার হাজরাহাটি শেখপাড়ার টোকন আলী মুন্সির ছেলে ও পারভেজ মহাসিন স্বপন একই এলাকার মইদুল ইসলামের ছেলে। মামলার বিবরণ সূত্রে জানা যায়, গত ৯ নভেম্বর দুপুরে খালেদা আক্তার মুন্নি হাটবোয়ালিয়া বাজারে মার্কেটে আসার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। একই দিন সন্ধ্যায় তার মায়ের সাথে মোবাইল ফোনে কথা হয় রাতে বাড়ি ফিরবে না বলে।
এরপর থেকেই নিখোঁজ ছিল। পরে বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) সকালে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার হাজরাহাটি বোয়ালমারী গ্রামের শ্মশান মাঠে একটি মেহগনি বাগানের ভিতরে নারীর অর্ধগলিত লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা। পুলিশকে খবর দেওয়া হলে ঘটনাস্থলে আসে। সিআইডি লাশের পাশে থাকা একটি ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে মোবাইল নাম্বার ও স্বর্ণের দোকানের ক্যাশ ভাউচার খুঁজে পায়। এ সূত্র ধরে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করে হত্যাকারীদের শনাক্ত করে।
পরে গতকাল শুক্রবার ভোরে পৌর এলাকার হাজরাহাটি শেখপাড়ায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান চালিয়ে মানিক আলী মুন্সি ও পারভেজ মহাসিন স্বপনকে আটক করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা দুইজনে হত্যার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। হত্যা মামলার প্রধান আসামি মানিক আলী মুন্সি স্বীকারোক্তিতে বলেন, হত্যাকাণ্ডের কয়েকদিন আগে মুন্নি কৌশলে গাংনীতে তার এক পরিচিত লোকের বাড়িতে ডেকে নিয়ে যায় আমাকে। সেখানে জিম্মি করে ২০ হাজার টাকা আদায় করে। টাকা নেওয়ার বিষয়টি প্রতিশোধ নিতে তার সাথে নিয়মিত মোবাইলফোনে যোগাযোগ রাখতাম। এরই ধারাবাহিকতায় ৯ নভেম্বর বিকেলে আলমডাঙ্গা এলাকা থেকে তাকে মোটরসাইকেলযোগে আমার চাচাতো ভাই মিলে চুয়াডাঙ্গায় নিয়ে আসি। আমার চাচাতো ভাই মোটরসাইকেলটি বাড়িতে রেখে আসে সন্ধ্যায়। আমি ও মুন্নি পান বরজের ভেতরে অবস্থান নিই। মোটরসাইকেল রেখে আমার চাচাতো ভাইও ঘটনাস্থলে আসে। পান বরজের পাশে মেহগুনি বাগানে যাই তিন জনেই। প্রথমে আমি শারীরিক সম্পর্ক করি। পরে আমার চাচাতো ভাই তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করে। এরপর মুন্নি চুক্তির টাকা চাইলে তারা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। প্রতিশোধ নিতেই মানিক আলী মুন্সি তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরে যুবতীকে শ্বাসরোধ করে দুইজনে হত্যা করে লাশ ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। তার ভ্যানিটি ব্যাগে থাকা নগদ টাকা, পায়ের নুপুর ও আংটি নিয়ে নেয়।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার খালেদা আক্তার মনের মা আহারণ নেছা বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গা আদালতের বিচারক জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তফা কামালের আদালতে হাজির করা হলে দুজনে ১৬৪ ধারায় হত্যার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি প্রদান করে। বিচারক তাদের জেল হাজতে প্রেরণের আদেশ দেন।
উল্লেখ্য, মুন্নির বাড়ী ভাংবাড়ীয়া জোয়ার্দারপাড়ায় গেলে গ্রামবাসী ও প্রতিবেশীরা জানান, খালেদা আক্তার মুন্নি উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন করতেন। পিতৃহীন ও দরিদ্র পরিবারের মুন্নি যৌবনের শুরুতে খারাপ পথে পা বাড়ান। তিন বছর আগে পার্শ্ববর্তী গৌরীহৃদ গ্রামের প্রবাসী আসিবের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। তবে বিয়ের পরেও মুন্নি উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন করতে থাকেন। ফলে কিছু দিনের মধ্যেই তাদের বিচ্ছেদ হয়। তারপর সুন্দরী মুন্নি ভারতে চলে যান। সেখানে একটি বারে ডান্স্যার হিসেবে কাজ করতেন। ভারত থেকে গত ৬ মাস আগে দেশে ফিরে আসেন মুন্নি। দেশে এসে আবারও তিনি জড়িয়ে পড়েন অসামাজিক কার্যকলাপে। তিনি কল গার্ল হিসেবে কাজ করতেন বলে প্রতিবেশীরা জানান। এছাড়াও তার মা জানান তার পুনরায় বিয়ে হয়েছিল মেহেরপুরে।
এদিকে, গতকাল রাতে ময়নাতদন্ত শেষে মুন্নির লাশ গ্রামে আনা হয়। পরে ভাংবাড়ীয়া কবরস্থানে জানাজা শেষে রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাকে দাফন করা হয়।