শনিবার (০৯ নভেম্বর) মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
মার্কিন ও কাতারি সূত্রের বরাতে সিএনএন জানিয়েছে, কাতার সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধের পরে হামাসকে তাদের দেশ থেকে তাড়িয়ে দিতে সম্মত হয়েছে। গোষ্ঠীটির শীর্ষ নেতারা কাতারের রাজধানী দোহাতে দীর্ঘ সময় ধরে বসবাস করে আসছেন। তবে কয়েক মাস চেষ্টার পর হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধে যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি মুক্তি চুক্তি ব্যর্থ হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছে দেশটি।
সূত্র জানিয়েছে, বাইডেন প্রশাসনের শীর্ষ অগ্রাধিকার ছিল যুদ্ধ থামানোর প্রচেষ্টা। ফলে গত দুই সপ্তাহ আগে মার্কিন কর্মকর্তারা কাতারকে জানিয়েছে যে রাজধানীতে হামাসের নেতাদের আশ্রয় দেওয়া বন্ধ করতে হবে। কাতার মার্কিনিদের িএ প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে এবং প্রায় সপ্তাহখানেক আগে বিষয়টি তাদের জানানো হয়েছে।
এক সিনিয়র কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেন, হামাস একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী যারা আমেরিকানদের হত্যা করেছে এবং আমেরিকানদের জিম্মি করে রেখেছে। জিম্মিদের মুক্তির প্রস্তাব বারবার প্রত্যাখ্যান করার পরে, এর নেতাদের আর কোনো আমেরিকান অংশীদারের রাজধানীতে স্বাগত জানানো উচিত নয়।
এদিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনেস বলা হয়েছে, হামাসের তিনজন নেতা জানিয়েছেন, তাদের বের করে দেওয়ার বিষয়ে কোনোকিছু কাতারের পক্ষ থেকে জানানো হয়নি। এছাড়া এ বিষয়ে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি নিশ্চিতকরণ বা মন্তব্যের জন্য রয়টার্সের অনুরোধের জবাব দেননি।
উল্লেখ্য, কাতার, যুক্তরাষ্ট্র এবং মিশর গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মিদের মুক্তির জন্য এখনও আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এতে কোনো ফলাফল মেলেনি। অক্টোবরের মাঝামাঝিতে দোহা আলোচনার সর্বশেষ রাউন্ড একটি যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়। এ সময় হামাস স্বল্পমেয়াদী যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে।
উল্লেখ্য, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় এক বছর ধরে হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। দেশটির অব্যাহত এ হামলায় সৃষ্ট ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করতে অন্তত ১৫ বছর সময় লাগবে। এজন্য প্রতিদিন ১০০টি লরি ব্যবহার করতে হবে।
জাতিসংঘের হিসাবমতে, গাজায় ভবন ধসে এ পর্যন্ত ৪২ মিলিয়ন টনেরও বেশি ধ্বংসস্তূপ জমা হয়েছে। এ ধ্বংসস্তূপগুলো যদি একসঙ্গে এক জায়গায় রাখা যায়, তাহলে তা মিশরের ১১টি গ্রেট পিরামিডের সমান হবে। এ ধ্বংসস্তূপ সরাতে ব্যয় হবে ৫০০ থেকে ৬০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি)।
ইউএন এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রামের হিসাব অনুসারে, গাজায় ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৯৭টি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা অঞ্চলটির মোট ভবনের অর্ধেকের বেশি। ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের মধ্যে এক-চতুর্থাংশ পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। এ ছাড়া এক-দশমাংশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এক-তৃতীয়াংশ বেশ খানিকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ভবনের ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে ফেলার জন্য ২৫০ থেকে ৫০০ হেক্টর জমির প্রয়োজন পড়বে
গাজাভিত্তিক জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তা গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘অবকাঠামোর যে পরিমাণ ক্ষতি করা হয়েছে, তা পাগলামির পর্যায়ে পড়ে... দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে একটি ভবনও নেই যেখানে ইসরায়েল হামলা চালায়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত অর্থেই এ অঞ্চলের ভৌগোলিক চিত্র পরিবর্তিত হয়ে গেছে। যেখানে আগে পাহাড় ছিল না, এখন সেখানে পাহাড় হয়ে গেছে। দুই হাজার পাউন্ডের বোমাগুলো আক্ষরিক অর্থেই এ অঞ্চলের মানচিত্র বদলে দিয়েছে।’