তিন ইস্যুতে মহাসচিবসহ বিএনপির তিন নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা। টানা তিন দিন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সিরিজ আলোচনায় গতকাল দ্বিতীয় দফা বিএনপির সঙ্গে এ বৈঠক করলেন তাঁরা। বৈঠকে আলোচনা হয়েছে প্রক্লেমেশন অব সেকেন্ড রিপাবলিক, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের অপসারণে পলিটিক্যাল কনসেনশাস ও জাতীয় ঐক্য ধরে রেখে কীভাবে সরকার এগিয়ে যাবে- এ তিন ইস্যুতে।
বিকাল সোয়া ৫টার দিকে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিএনপির পক্ষে অংশ নেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ ও যুগ্ম মহাসচিব শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী। অন্যদিকে আট সদস্যের প্রতিনিধি দলে ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, সদস্যসচিব আরিফ সোহেল, মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ, মুখপাত্র উমামা ফাতেমা এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারি, সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখপাত্র সামান্থা শারমিন ও সদস্য আরিফুল ইসলাম আদিব।
বৈঠক শেষে হাসনাত আবদুল্লাহ উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে মূলত তিনটি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রথম বিষয়টি হলো প্রক্লেমেশন অব সেকেন্ড রিপাবলিক (দ্বিতীয় স্বাধীনতার ঘোষণা) কীভাবে ঘোষণা দেওয়া যায়। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের অপসারণ খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে কীভাবে ও কোন প্রক্রিয়ায় হতে পারে তা নিয়েও আমরা কথা বলেছি। এ ক্ষেত্রে পলিটিক্যাল কনসেনশাস কীভাবে তৈরি করা যায় এবং যে কোনো ধরনের সংকট কীভাবে মোকাবিলা করা যায় সে বিষয় নিয়েও কথা হয়েছে। তৃতীয়ত. জাতীয় ঐক্য ধরে রেখে কীভাবে সরকার এগিয়ে যেতে পারে সে বিষয়েও কথা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপি নেতারা আমাদের সব কথা শুনেছেন। তাঁরা বলেছেন আমাদের এ মেসেজ নিয়ে তাঁরা দলের সর্বোচ্চ ফোরামে আলোচনা করবেন।’ হাসনাত আবদুল্লাহ আরও বলেন, ‘গত দুই দিনে আমরা বিএনপি ছাড়াও জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তাদের সঙ্গেও আমরা একই বিষয়ে কথা বলেছি। জামায়াত জানিয়েছে নৈতিক জায়গা থেকে চুপ্পুর (মো. সাহাবুদ্দিন) আর রাষ্ট্রপতি পদে থাকার অধিকার নেই। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও একই কথা বলেছে। এ ছাড়া আমরা গণতান্ত্রিক মঞ্চ, গণ অধিকার পরিষদ ও ১২-দলীয় জোটের সঙ্গে বৈঠক করব। জাতীয় ঐক্য ধরে রাখার জন্য আমাদের এ সংলাপ অব্যাহত থাকবে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতির পদচ্যুতির দাবি তোলার পর ২৩ অক্টোবর সালাহউদ্দিন আহমেদসহ বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের তিন নেতা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করে এ মুহূর্তে কোনো সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি না করার কথা বলেছিলেন। বিএনপি মনে করে, এ মুহূর্তে রাষ্ট্রপতির পদে শূন্যতা হলে সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক সংকট দেখা দেবে, সেটা বিএনপি চায় না।
এর পরই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতির পদচ্যুতির বিষয়ে জাতীয় ঐক্য তৈরির জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর অংশ হিসেবে গত বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদের বাসায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রতিনিধিদের বৈঠক হয়। সে বৈঠকে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও যোগ দেন।