সাংবাদিকরা গণমাধ্যমের মালিকানা-পরিচালনায় ব্যাপক সংস্কার চান

সাংবাদিকরা গণমাধ্যমের মালিকানা-পরিচালনায় ব্যাপক সংস্কার চান

ক্ষমতাধর শ্রেণির রাহুমুক্ত সাংবাদিকতা নিশ্চিতে গণমাধ্যমের মালিকানা, পরিচালনানীতিসহ নানান বিষয়ে ব্যাপক সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন সর্বস্তরের সাংবাদিকরা।

তারা বলেছেন, করপোরেট মালিকদের স্বার্থরক্ষা ও রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তিমূলক সাংবাদিকতা পেশাদার গণমাধ্যমকর্মীদের অধিকার নষ্টের পাশাপাশি গণমাধ্যমকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। এ সংকট কাটাতে গণমাধ্যমের সামষ্টিক চরিত্র পাল্টে জনবান্ধব করার দাবি জানান তারা।

শনিবার (১৭ আগস্ট) বিকেলে ‘গণমাধ্যম সংস্কার উদ্যোগ’ এর ব্যানারে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত মতবিনিয়ময় সভায় এসব কথা বলেন সাংবাদিকরা।

সভা পরিচালনা করেন সাংবাদিক আরিফুল সাজ্জাত ও আহম্মদ ফয়েজ। এসময় মুক্ত, স্বাধীন ও শক্তিশালী গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠায় একটি নির্দলীয় প্ল্যাটফর্ম তৈরির বিষয়ে একমত হন সর্বস্তরের সাংবাদিকরা।

অনুষ্ঠানে লেখক ও গবেষক আলতাফ পারভেজ বলেন, সাম্প্রতিক রাষ্ট্রীয় গণহত্যায় গণমাধ্যম কোনোভাবেই তার দায় এড়াতে পারে না। সেজন্য এখন আমাদের প্রচণ্ড রকমের আত্মসমালোচনা দরকার। সাংবাদিকতার জগতে এখন তিনটি অভ্যুত্থান দরকার। প্রথম করপোরেট ইন্ডাস্ট্রির বিরুদ্ধে, দ্বিতীয় দলীয় সাংবাদিক ইউনিয়ন ও প্রেস ক্লাবের বিরুদ্ধে, তৃতীয় নিজেদের লোভ ও পক্ষপাতের বিরুদ্ধে আমাদের অভ্যুত্থান দরকার।

অনুষ্ঠানে সিনিয়র সাংবাদিক খায়রুজ্জামান কামাল, সেলিম সামাদ, টিআরটি ওয়ার্ল্ডের বাংলাদেশ প্রতিনিধি কামরুজ্জামান বাবলু, একাত্তর টেলিভিশনের শাহনাজ শারমিন, নিউ এইজের মঈনুল হক, মাইটিভির মাহবুব সৈকত, কালবেলার জুনাইদ শিশির, সাংবাদিক মিজানুর রহমান কবির, নিউজ ২৪ এর হোসাইন শাহদাৎ ও দ্য বিজনেস পোস্টের আশরাফুল ইসলাম রানা বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে গণমাধ্যমে সংস্কারের জন্য ১৩ দফা দাবি পেশ করেন সাংবাদিকরা। দাবিগুলো হলো-

> ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় নিহত সাংবাদিকদের হত্যার বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
> ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে ঘিরে আহত-নিহত গণমাধ্যমকর্মী ও আক্রান্ত গণমাধ্যমকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সব বন্ধ গণমাধ্যম অবিলম্বে খুলে দিতে হবে।
> গণমাধ্যমের যেসব মালিক ও নির্বাহীরা গণমাধ্যমকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে তৈরি করেছে, তদন্ত সাপেক্ষ তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
> গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য অভিন্ন ওয়েজবোর্ড প্রণয়ন করতে হবে। অবিলম্বে নবম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন করতে হবে। যারা অষ্টম ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন করেছে বলে রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা নিয়েছে কিন্তু বাস্তবে বাস্তবায়ন করেনি তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত স্বাপেক্ষে ব্যবস্থা নিতে হবে।
> শ্রম আইন অনুযায়ী লভ্যাংশ বণ্টন করতে হবে।
> উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অগণতান্ত্রিক উপায়ে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের দখলদারত্বের যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে তা বন্ধ করতে হবে।
> গণমাধ্যম কর্মীদের সর্বস্তরের ভয়ভীতি বন্ধ করতে হবে। গণমাধ্যম পরিচালনা সংবাদ প্রচার ও প্রকাশ এবং সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃত্ব নির্বাচনে সরকার ও বিশেষ সংস্থার নির্দেশনা, নিয়ন্ত্রণ প্রবণতা চিরতরে বন্ধ করতে হবে।
> গণমাধ্যম পরিচালনার ধরনসহ সার্বিক বিষয়ে সংস্কারের জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিশন গঠন করতে হবে।
> গণমাধ্যম ও স্বাধীন মত প্রকাশের বিরোধী নিবর্তনমূলক আইনের সব ধারা বাতিল করতে হবে।
> আইসিটি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও সাইবার সিকিউরিটি আইনের অধীনে গণমাধ্যমকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
> সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাসহ সব হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
> বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিকদের গুম, নির্যাতন ও হয়রানির সঙ্গে জড়িতদের বিচার করতে হবে।
> সব গণমাধ্যম যেন গণমানুষের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করতে পারে সেই নিশ্চয়তার বিধান করতে হবে।