ঢাকার শপিংমল-হোটেল-রেস্তোরাঁ জমে উঠছে

ঢাকার শপিংমল-হোটেল-রেস্তোরাঁ জমে উঠছে

কোটা সংস্কার আন্দোলন, কারফিউ ও সাধারণ ছুটিকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ সময় পুরোপুরি অচল ছিল রাজধানী। এ সময় অফিস-আদালতের পাশাপাশি বন্ধ ছিল শপিংমল ও দোকানপাট। তবে সরকার পতনের পর খুলেছে ঢাকার মার্কেট ও শপিংমলগুলো। এছাড়া আতঙ্কের মধ্যে থাকা হোটেল রেস্তোরাঁগুলোও সাধারণ মানুষের কাছে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে

গতকাল সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন শপিং মল ও হোটেল-রেস্তোরাঁ ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। ধীরে ধীরে বাড়ছে ক্রেতা সমাগম।

গত বৃহস্পতিবার থেকে খুলেছে নিউ মার্কেট। আর শুক্রবার থেকে খুলেছে নিউ মার্কেট এলাকার নূরজাহান শপিং কমপ্লেক্স, রাজধানীর পান্থপথে অবস্থিত বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স ও কুড়িলে অবস্থিত যমুনা ফিচার পার্কসহ অন্যান্য শপিংমল। অন্যদিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় থাকা হোটেল রেস্তোরাঁগুলো ভীতি কাটিয়ে খুলেছে আগেই।

সোমবার সকালে যমুনা ফিচার পার্ক ঘুরে দেখা যায়, শপিংমলটির সব দোকানপাটই খুলেছে। ক্রেতারাও এসেছে বেশ। বিক্রেতারা ব্যস্ত ক্রেতাদের সেবা দিতে। যমুনা ফিউচার পার্কে থাকা ভারতীয় ভিসা সেন্টারের কার্যক্রমও সীমিত পরিসরে চলছে। আপাতত ভিসা সেন্টারে জমা থাকা পাসপোর্টগুলো পূর্বে দেওয়া এসএমএসের ভিত্তিতে পাসপোর্ট হোল্ডারদের ফেরত দিচ্ছে।

সন্ধ্যায় বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা যায়, মানুষের বেশ আনাগোনা শপিং কমপ্লেক্সটিতে। ভয়-শঙ্কা কাটিয়ে খোলে কমপ্লেক্সের দোকানগুলো। মার্কেটে আসা মানুষদের কেউ ঘুরে ঘুরে দেখছেন আবার কেউ কিনছেন।

মগবাজারসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আন্দোলনের সময় সীমিত পরিসরে হোটেল রেস্তোরাঁগুলো খোলা ছিল। কোনো হইচই শুরু হলেই সঙ্গে সঙ্গে হোটেল রেস্তোরাঁগুলোর সাটার নামিয়ে দিতো কর্মীরা। সবার মধ্যে একটা ভয় কাজ করতো। কিন্তু গত ৩ দিনে এমন পরিস্থিতি হয়নি। এখন হোটেলগুলো খোলা হচ্ছে ও ক্রেতারাও আসছেন।

নূরজাহান শপিং কমপ্লেক্সের একটি প্যান্টের দোকানের বিক্রেতা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রায় ৫ দিনের মতো মার্কেট বন্ধ ছিল। গতকাল থেকে মার্কেট খুলেছে। তবে তেমন ক্রেতা আসছে না। হয়তো এই সপ্তাহ নাগাদ সবকিছু স্বাভাবিক হতে শুরু করবে।

নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহীন বলেন, ব্যবসায়ীদের মধ্যে এখনো আতঙ্ক আছে। তবে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হচ্ছে। ব্যবসায়ীরাও দোকানপাট খোলার চেষ্টা করছে। তারা পর্যবেক্ষণ করছে। কারণ এতো বড় একটি পরিবর্তন এবং এর পাশাপাশি থানাগুলোও সচল না। থানাগুলো সচল হলে পুরোদমে কর্মকাণ্ড শুরু হবে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, প্রায় এক মাস ধরে সংকট চলছে। অনেক দোকানদার ভাড়া দিতে পারছেন না, কর্মচারীদের বেতন দিতে পারছেন না। কারণ দোকান বন্ধ ছিল, ক্রেতা ছিল না। তবে এখন পরিস্থিতি পরিবর্তন হচ্ছে। আশা করি দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে।

মগবাজার মোড়ে অবস্থিত নিউ স্টার হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের কর্মী সোহেল বলেন, আমাদের খাবার হোটেল বন্ধ ছিল না। তবে সাটার টানা ছিল। হট্টোগোল হলে নিরাপত্তার জন্য বন্ধ করে দেওয়া হতো। ক্রেতাও ছিল কম। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। খাবার হোটেল খোলা আছে। ক্রেতার আসছেন। এখন কোনো ভয় নেই।

বাংলাদেশ রেস্টুরেন্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক ও নবাবী ভোজের নির্বাহী পরিচালক কামরুল হাসান চৌধুরী বলেন, গত বৃহস্পতিবার ২ ঘণ্টার জন্য আমাদের শাখাগুলো খোলা হয়েছিল। তবে শুক্রবার থেকে পরিস্থিতি প্রায় স্বাভাবিক। মানুষজন আসছেন। অনেকেই এখন ঘুরতে বের হচ্ছেন।

এদিকে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, আইটিসি ও বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সঙ্গে সেনা সদর দপ্তরে সেনা কর্মকর্তাদের যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কলকারখানা, মার্কেট ও বিপণিবিতানের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বিধানে কাজ করা হবে বলে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে ঢাকাসহ সারা দেশে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়লে গত ১৮ জুলাই দিনগত রাতে সারা দেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন ও কারফিউ জারি করে শেখ হাসিনা সরকার। প্রথম দিকে দিনে দুই–তিন ঘণ্টা করে কারফিউ শিথিল করা হলেও পরে ধীরে ধীরে তা বাড়ানো হয়। এরপর ছাত্রদের আন্দোলনটি রূপ নেয় অসহযোগ আন্দোলনে। সর্বশেষ গত ৫ আগস্ট আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়লে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করে। এর আগে বেশিরভাগ সময়ই শপিংমল ও হোটেল রেস্তোরাঁ বন্ধ ছিল।