চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে টানা দুদিনের ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় তিন হাজার পরিবার। কাজ না থাকায় কষ্টে রয়েছেন দিনমজুরসহ খেটে খাওয়া মানুষ। ঢলের স্রোতে ভেঙে গেছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার গ্রামীণ সড়ক। ক্ষতি হয়েছে রোপা আমন ও সবজি ক্ষেতের। অনেক মৎস্য প্রকল্প থেকে মাছ ভেসে গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টানা দুই দিনের বৃষ্টিতে উপজেলার করেরহাট, হিঙ্গুলী, বারইয়ারহাট পৌরসভা, মিরসরাই পৌরসভার নিম্নাঞ্চল, জোরারগঞ্জ, ইছাখালী, কাটাছড়া, দুর্গাপুর, মিঠানালা, খৈয়াছড়া, ওসমানপুর, সরকারতালুক, খিলমুরারী ও ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে জোরারগঞ্জ-মুহুরীপ্রজেক্ট সড়ক। পানিবন্দি হয়ে আছে ফেনাফুনী, ওসমানপুরের মরগাং, চিনকীআস্তান, সরকারতালুক, মাইজগাঁও, খাজুরিয়া, ইছাখালী ভূঁইয়া গ্রাম ও খিলমুরালী গ্রামের তিন সহস্রাধিক পরিবার।
ফেনাফুনি এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ হাসান বলেন, আমরা প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে পানির মধ্যে বসবাস করছি। সামান্য বৃষ্টি হলে পাহাড়ি ঢলে পুরো এলাকা ডুবে যায়। মূলত ফেনাফুনি খালটি দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে সংস্কার না হওয়ায় এমনটা হচ্ছে। এক মাস পূর্বে এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরেজমিনে এসে ব্যবস্থা গ্রহণ করার আশ্বাস দিলেও গত দুইদিনের বৃষ্টিতে আমরা ডুবে রয়েছি।
উপজেলার মধ্যম ওয়াহেদপুর এলাকার বাসিন্দা জাকার হোসেন বলেন, পাহাড়ি ঢলে আমাদের হাবিব উল্লাহ ভূঁইয়া সড়ক ছড়ায় বিলীন হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে হামিদ আলী ভূঁইয়া জামে মসজিদ থেকে রেললাইন পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার মিটার সড়কে স্বাধীনতার পর সরকারি কোনো উন্নয়ন কাজ হয়নি।
উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের হরিহরপুর গ্রামের কৃষক মোজাম্মেল হোসেন জানান, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে আমার প্রায় এক একর জমির রোপা আমন তলিয়ে গেছে।
আবুতোরাব বাজার এলাকায় মায়ানী-মঘাদিয়া খালে দেখা গেছে, আবুতোরাব বাজারের পেট ঘেঁষে খালটি পশ্চিম দিকে ঘুরেছে। বাজারটির পূর্ব অংশ থেকে শুরু করে মঘাদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের পশ্চিম অংশ পর্যন্ত দখল-দূষণে ছোট হয়ে আসছে এই খাল। খালের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে দোকান। কেউ কেউ খালের ওপর খুঁটি পুঁতে অস্থায়ী দোকান নির্মাণ করছেন। স্থানীয়দের পাশাপাশি কিছু প্রভাবশালীও দখল প্রতিযোগিতায় মেতেছেন সমানতালে। এছাড়া পুরো একটি বাজারের ময়লা আবর্জনা ফেলার অন্যতম স্থান হিসেবে তারা এই খালটিকে বেছে নিয়েছেন। এতে বৃষ্টি হলে পানি আটকে পুরো এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়।
খৈয়াছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজুল হক জুনু বলেন, আমার ইউনিয়নের ফেনাফুনি ও সৈদালী গ্রামে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। মূলত মায়ানী ও মঘাদিয়া ইউনিয়নের লোকজন খাল দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের কারণে আমার ইউনিয়নের লোকজন পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে রোপা আমন ডুবে গেছে। এছাড়া সবজির কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টি যদি অব্যাহত থাকে তাহলে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে
মিরসরাই উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা নাসিম আল মাহমুদ জানান, মৎস্য প্রকল্পগুলোর পাড় নিচু হওয়ায় দুইদিন বৃষ্টি হলেই পানি বাইরে চলে যায়। টানা পাঁচদিন বৃষ্টি হওয়ায় মৎস্যচাষীদের ক্ষতি হতে পারে। তবে বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেলে ক্ষতির পরিমাণ কমে যাবে।