চলতি অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি ছিল ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ ঘাটতি বাড়ছে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। বাজেটের ঘাটতি পূরণ করা হয় সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক ও বৈদেশিক ঋণের মাধ্যমে। আগামী অর্থবছরে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফের চাপের কারণে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য কমিয়ে দিয়েছে সরকার। এ খাতে ঋণ নেওয়া হবে ১৬ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ২ হাজার কোটি টাকা কম। চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ধরা রয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা।অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানাচ্ছে, বাংলাদেশকে ঋণ দেওয়ার জন্য আইএমএফ যেসব শর্ত দিয়েছিল তার মধ্যে সরকারকে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ঋণ নেওয়ার পরিমাণ কমিয়ে আনার কথাও ছিল।
আইএমএফের শর্ত, আগামী কয়েক বছরে এ খাত থেকে ঋণ নেওয়ার পরিমাণ শূন্যে নামিয়ে আনতে হবে।বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে ২০২৩ এপ্রিলে সরকারের পুঞ্জীভূত ঋণের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৬০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। চলতি এপ্রিলে এই ঋণের পরিমাণ ২১৪ কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৬০ হাজার ৭১৪ কোটি টাকায়। এর আগে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে সব মিলিয়ে ১ লাখ ৮ হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে।
এর মধ্যে গ্রাহকদের মূল টাকা (বিনিয়োগ) ও মুনাফা (সুদ) বাবদ পরিশোধ করা হয় ৮৮ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা।হিসাব বলছে, অর্থবছর শেষে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধের পর এ খাতে সরকারের নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ১৯ হাজার ৯১৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৫২ দশমিক ৪৪ শতাংশ কম। ২০২০-২১ অর্থবছরে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪১ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ৩২ হাজার কোটি টাকার ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ধরেছিল।কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এসব হিসাবে দেখা যায়, গত অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এ খাত থেকে ৩৭ দশমিক ৫০ শতাংশ কম ঋণ নিয়েছিল সরকার। ২০২০-২১ অর্থবছরে মোট ১ লাখ ১২ হাজার ১৮৮ কোটি ২৪ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়।
এর মধ্যে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল বাবদ ৭০ হাজার ২২৯ কোটি টাকা গ্রাহকদের পরিশোধ করা হয়। সে হিসাবে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪১ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল। সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার সবচেয়ে বেশি ঋণ নিয়েছিল ২০১৬-১৭ অর্থবছরে— ৫২ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা।