রাশিয়া, চীন ও ইরানের ভয়ে বিশ্বজুড়ে অস্ত্র কেনার হিড়িক

রাশিয়া, চীন ও ইরানের ভয়ে বিশ্বজুড়ে অস্ত্র কেনার হিড়িক

যুদ্ধ সংঘাতে বিপর্যস্ত বিশ্ব। ইউক্রেনে রুশ অভিযান আর গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন। সব মিলিয়ে বিরাজ করছে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি। আত্মরক্ষায় তাই নিজেদের অস্ত্র ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে ব্যস্ত দেশগুলো। এর মধ্যে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ায় বিগত পাঁচ বছরে অস্ত্র কেনার হার বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এসআইপিআরআই) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এমনটা জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইউরোপে অস্ত্রের কেনাকাটা বেড়েছে। ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালে ইউরোপের দেশগুলো দ্বিগুণ অস্ত্র কিনেছে। অস্ত্র কেনায় ইউরোপে গত পাঁচ বছরে সবচেয়ে এগিয়ে ছিল ইউক্রেন। এ সময় অস্ত্র কেনায় সারা বিশ্বে শীর্ষে থাকা দেশগুলোর মধ্যে ইউক্রেনের অবস্থান চতুর্থ।

গত পাঁচ বছরে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র রপ্তানি হয়েছে এশিয়ার দেশগুলোতে, যা বিশ্বের মোট অস্ত্র রপ্তানির ৩৭ শতাংশ। এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি অস্ত্র কিনেছে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত। এসআইপিআরআইয়ের জ্যেষ্ঠ গবেষক পিটার ওয়েজেম্যানের ভাষ্য মতে, এর পেছনে বড় কারণ একটাই, তা হলো এশিয়ায় চীনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা।

উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, এই সময়ে জাপান অস্ত্রের আমদানি আড়াই গুণ বাড়িয়েছে। অন্যান্য অস্ত্রের সঙ্গে তারা ৪০০টি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র কিনেছে। সেগুলো উত্তর কোরিয়া ও চীনে আঘাত হানতে সক্ষম।  

মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র কিনেছে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র কাতার, মিসর ও সৌদি আরব। পরিমাণটা বিশ্বের মোট অস্ত্র আমদানির ৩০ শতাংশ। পিটার ওয়েজেম্যান বলেন, ‘শুধু ইরানের ভয়েই এটা ঘটছে, তা নয়। এটা আসলে যুদ্ধকালীন অবস্থা।’ সৌদি আরব বিগত ১০ বছরে ইয়েমেনসহ বিভিন্ন দেশে অভিযান চালাতে এসব অস্ত্র ব্যবহার করেছে।

এ অস্ত্র কেনাবেচার পেছনে আঞ্চলিক বৈরী সম্পর্কও একটি কারণ। যেমন, ২০১৭ সালে কাতারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। এরপর অস্ত্রের আমদানি চারগুণ বাড়িয়েছে দোহা। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স থেকে অস্ত্র আমদানি করেছে দেশটি। 

বিষয়টি নিয়ে আমেরিকান কলেজ অব গ্রিসের ইতিহাসের অধ্যাপক কনস্তানতিনোস ফিলিস বলেন, পশ্চিমাদের মিত্র দেশগুলোর এ নিয়ে নিরাপত্তাহীনতা কাজ করে যে, তাদের ওপর কোনো হামলা হলে যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে আসবে কি না? দেশগুলোর ভাষ্য, তারা যদি নিজেরা সামরিকভাবে বলীয়ান না হয়, তাহলে কেউ তাদের রক্ষায় এগিয়ে আসবে না।

আর এই সুযোগে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র রফতানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিক্রি হওয়া অস্ত্রের ৪২ শতাংশই গেছে এই দেশ থেকে। বিপরীতে বিক্রি কমেছে রাশিয়ার। এতে তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা রাশিয়ার জায়গা দখল করে নিয়েছে ফ্রান্স।