ইসলামের ইতিহাসে রোজা

ইসলামের ইতিহাসে রোজা

পৃথিবীতে মানুষের পথচলার শুরু থেকেই রোজার সূচনা। আদি পিতা আদম (আ.) প্রথম জমিচাষ করার মাধ্যমে খাবার শুরু করেন এবং তার ওপরই অর্পিত হয় রোজার বিধান। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘হে ইমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যাতে তোমরা খোদাভীরু হতে পারো’ (সুরা বাকারা : ১৮৩)। বিখ্যাত মুফাসসির আল্লামা আলুসি (রহ.) বলেছেন, এ আয়াতে ‘মিনকাবলিকুম’ দ্বারা হজরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে হজরত ঈসা (আ.) পর্যন্ত সব নবী-রাসুলের যুগ বোঝানো হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা হজরত আদম (আ.)-কে জান্নাতে একটি গাছের ফল খেতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বিশেষ এক ধরনের রোজা রাখার নির্দেশ প্রদান করেন। এটাই ছিল মানব ইতিহাসের প্রথম রোজা। হজরত আদম (আ.) ও হজরত হাওয়া (আ.) শয়তানের প্ররোচনায় ওই গাছের ফল ভক্ষণ করেছিলেন এবং এর পরিণামে আল্লাহ তায়ালা তাদের ভূপৃষ্ঠে পাঠিয়ে দেন। অতঃপর তারা উক্ত ভুলের জন্য অনুতপ্ত হয়ে তওবা-ইস্তেগফার করেন এবং এর কাফফারাস্বরূপ ধারাবাহিক ৪০ বছর রোজা রেখেছিলেন। (তাফসিরে রুহুল মাআনি)

হজরত আদম (আ.)-এর পর অন্য সব নবী-রাসুলের সময়ও রোজার বিধান ছিল। তবে তাদের রোজা পালনের পদ্ধতি ভিন্নতর ছিল। হজরত নুহ (আ.)-এর ওপরও রোজা ফরজ ছিল; রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, হজরত নুহ (আ.) ১ শাওয়াল ও ১০ জিলহজ ছাড়া সারা বছর রোজা রাখতেন (ইবনে মাজাহ)। হজরত মুসা (আ.)-এর ওপর তাওরাত কিতাব অবতীর্ণ হওয়ার আগে তিনি ৩০ দিন রোজা রেখেছিলেন। অতঃপর মহান আল্লাহ তায়ালা তার ওপর ওহি নাজিল করলেন এবং আরও দশ ১০ দিন রোজা রাখার নির্দেশ প্রদান করলেন। হজরত ইদ্রিস (আ.) বছরজুড়ে প্রতিদিন রোজা রাখতেন। হজরত দাউদ (আ.) একদিন পরপর রোজা রাখতেন। হজরত হাসান বসরি (রহ.) বলেন, পূর্ববর্তী উম্মতদের ওপরও পূর্ণ এক মাস রোজা ফরজ ছিল। রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতদের ওপর রমজানের রোজা ফরজ ছিল। (তাফসিরে ইবনে কাসির : ২/৫০১)

হিজরি দ্বিতীয় বছর উম্মতে মুহাম্মদির ওপর রোজা ফরজ করা হয়। অন্যান্য ধর্মে রোজার বিধান থাকলেও ইসলামের রোজা আর অন্য ধর্মের রোজায় পার্থক্য অনেক। ইহুদি ধর্মে রোজা শোক ও বেদনার প্রতীক। রোজা মুসলমানদের অন্য শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের পন্থা। উন্নত চরিত্র গঠনের উপায়। নৈতিকতা ও মানিবকগুণে গুণান্বিত হয়ে গড়ে ওঠার কৌশল। রোজার ঐতিহাসিক গুরুত্বও অপরিসীম। প্রথম রোজায় হজরত ইব্রাহিম (আ.) সহিফা এবং ৬ রোজায় হজরত মুসা (আ.) তাওরাত লাভ করেন। ১৩ রোজায় ঈসা (আ.)-এর ওপর ইঞ্জিল, ১৮ রোজায় হজরত দাউদ (আ.) জাবুর এবং রমজানের ২৭ তারিখে মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ কুরআন অবতীর্ণ হয়।