সন্তানের মৃত্যুর চেয়ে বড় কোনো বেদনার ভার পৃথিবীতে আর নেই। যে কোনো বাবা-মা সন্তানের মৃত্যুতে নিজেরা বেঁচে থেকেও দুনিয়াতে নরকযন্ত্রণা ভোগ করেন। তাদের কাছে জীবন হয়ে ওঠে অর্থহীন, যেন রাত্রির বিভীষিকাময় অন্ধকার। ঠিক ১৫ বছর আগে দেশের ইতিহাসে নৃশংসতম পিলখানা হত্যাকাণ্ড বহু বাবা-মাকে করেছে সন্তানহারা। সেইসব বাবা-মায়ের চোখের জল আজও শুকায়নি। দুঃসহ সেই স্মৃতি এখনো তাদের তাড়িত করে অহর্নিশ। মফিজুল ইসলাম সরকার ও মমিনুর নেসা সরকার তেমনই অভাগা বাবা-মা। যারা ১৫ বছর আগে পিলখানায় নির্মম হত্যাকাণ্ডে হারিয়েছিলেন আদরের সন্তান মেজর মোহাম্মদ মুমিনুল ইসলাম সরকারকে।
২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় তৎকালীন সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিডিআরের (বর্তমানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি) সদরদপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনের প্রাণহানি হয়েছিল। যা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আলোচনা ও চর্চায় আসে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও। নারকীয় সেই হত্যাকাণ্ডের ১৫ বছর পূর্ণ হলো। তবে এখনো স্বজন হারানোর শোকে ম্যুহমান অনেক পরিবার। তাদের অনেকে যেমন সন্তানহারা, অনেকেই হারিয়েছেন স্বামী, বাবা অথবা স্বজন।
পিলখানায় নির্মম হত্যাকাণ্ডে ছেলে হারানোর বেদনা এখনো প্রতিনিয়ত কাঁদায় নিহত মেজর মোহাম্মদ মুমিনুল ইসলাম সরকারের বাবা-মাকে। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া দুজনেই গত ১৫ বছর ধরে একসঙ্গে ছেলের কবরের সামনে বসে চোখের পানি ফেলেন। নীরবে অঝোরে কাঁদেন। সন্তানহারা এই বৃদ্ধ বাবা-মায়ের কান্না দেখে আত্মীয়-পরিজন, সেনাসদস্য, এমনকি গণমাধ্যমকর্মীদেরও চোখ ছলছল হয়ে ওঠে। যেন তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলেন সবাই।