জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে লড়াইয়ে দুর্বল হয়ে পড়া বাহিনীকে শক্তিশালী করতে তরুণ বয়সী সব নারী-পুরুষকে বাধ্যতামূলক সেনাবাহিনীতে নিয়োগের প্রক্রিয়া এপ্রিলে শুরু করতে যাচ্ছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। তাতে নতুন করে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে অভ্যন্তরীণ যুদ্ধবিগ্রহে সংকটে থাকা দেশটির তরুণদের মধ্যে। সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে স্বজাতির বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে না নিলে বা সামরিক আইন অমান্য করলে যে শাস্তির মুখে পড়তে হতে পারে, সেই আশঙ্কা থেকে এখন দেশ ছাড়ছেন তারা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো ছবি ও ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ইয়াঙ্গনে থাইল্যান্ড দূতাবাসের সামনে কাগজপত্র নিয়ে লম্বা লাইনে ভিড় করছেন মিয়ানমারের তরুণরা। তাদের বরাতে সিএনএন লিখেছে, কীভাবে সেনাবাহিনীতে যোগদান এড়ানো যায়, সেই উপায় খুঁজছেন তারা। প্রয়োজনে অবৈধ উপায়ে হলেও তারা দ্রুত দেশ ছাড়ার কৌশল খুঁজছেন। অনেকে আবার মিয়ানমার সেনাবহিনীতে যোগ না দিয়ে উল্টো সরকারবিরোধী বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোতে যোগ দেওয়ার কথাও ভাবছেন।
মিয়ানমারের দক্ষিণাঞ্চলীয় এলাকার এক তরুণী বলেন, আমরা আতঙ্কের মধ্যে আছি। পালানোর চিন্তাভাবনা করছি। আমি মিয়ানমারে থাকতে পারব বলে মনে হয় না।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলকভাবে যোগদান সংক্রান্ত একটি আইন জারির ঘোষণা দেয় মিয়ানমার সরকার। বলা হয়, ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী সব পুরুষ এবং ১৮ থেকে ২৭ বছর বয়সী সব নারীকে অবশ্যই দুই বছর সেনাবাহিনীতে কাজ করতে হবে।
আইন জারির তিন দিন পর জান্তা সরকার জানায়, ওই নিয়ম চালু হচ্ছে এপ্রিল থেকে। জান্তা মুখপাত্র জ মিন তুন বলেন, এপ্রিলে নতুন বছরের ছুটির পর থেকে বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ বাস্তবায়নে তারা কাজ করছেন। অবসরপ্রাপ্ত নিরাপত্তা কর্মকর্তাদেরও সেনাবাহিনীতে ফেরানোর ঘোষণা দেয় সরকার। আর ৪৫ বছর বয়সের মধ্যে থেকে চিকিৎসকদের মত বিশেষজ্ঞদের বাধ্যতামূলক তিন বছর সেনাবাহিনীতে থাকার ঘোষণা দেওয়া হয়।
এই আদেশ কেউ অমান্য করলে তার পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও জরিমানা হতে পারে। জান্তা সরকারের এ আইন প্রয়োগের ঘোষণার পর থেকেই তরুণরা বিদেশের ভিসা সেন্টারগুলোতে ছুটছেন।
মিয়ানমারে মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রুস এক বিবৃতিতে বলেছেন, “পর্যদুস্ত বাহিনীর হতাশা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা চরম বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। সৈন্যদের হতাহত হওয়ার ঘটনা আর সেনা সদস্য নিয়োগের চ্যালেঞ্জ এখন জান্তার অস্তিত্বের জন্যেই হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফ্রন্টলাইনে তারা জোরালো আক্রমণের সম্মুখীন হচ্ছে। আর তরুণ-তরুণীদের সামরিক বাহিনীতে বাধ্যতামূলক নিয়োগের মাধ্যমে তারা বেসামরিক লোকেদের ওপর আক্রমণও দ্বিগুণ করেছে।
সরকারের মুখপাত্র জ মিন তুন বলেন, মিয়ানমারের ১ কোটি ৩০ লাখ তরুণ নারী-পুরুষ বাধ্যতামূলক সেনাবাহিনীতে যোগদানের জন্য যোগ্য। এর মধ্যে ৬০ হাজার পুরুষকে প্রথম পর্যায়ে এপ্রিলে নিয়োগ করা হবে।
তবে তাদের কীভাবে সেনাবাহিনীতে ডাকা হবে, কী প্রশিক্ষণ তারা পাবে, সে ব্যাপারে তেমন কিছু জানা যায়নি। তরুণ বয়সীরা ওই আইন নিয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত্র।
তারা মনে করছেন, তাদের ফ্রন্টলাইনে পাঠানো হতে পারে। পাহাড় আর জঙ্গলে তাদের পাঠানো হতে পারে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ছাড়াই।
ইয়াঙ্গন অঞ্চলের ২৮ বছর বয়সী শিক্ষক কিয়াও নায়িং ছদ্মনামে সিএনএনকে বলেন, “আইনে যাই লেখা থাকুক না কেন, নিয়োগকৃতদের সামনের সারিতেই পাঠানো হবে বলে তারা নিশ্চিত। এ ব্যাপারে দেশের কারো সন্দেহ নেই।”
মিয়ানমারের নির্বাসিত ছায়া সরকারের মানবাধিকার মন্ত্রী অং মিয়ো মিন বলেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী থেকে গণহারে পালিয়ে যাওয়ার খবর তারা পেয়েছেন। দলছুট এসব সেনা সদস্যরা জানাচ্ছেন, তাদের কাছে পর্যাপ্ত খাবার নেই। বেসামরিক লোকেদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাদের বাধ্য করা হচ্ছেন।