কোভিড ১৯ ভাইরাসটি আমাদের একেকজনের দেহে একেকরকম উপসর্গ তৈরি করে। কারো কারো ক্ষেত্রে হয়তো কোভিড ১৯ জীবনঘাতী আবার কারো ক্ষেত্রে এটা নিতান্ত সাধারণ সিজনাল ফ্লু-এর মতন উপসর্গ তৈরি করে। আমরা সাধারণত কোভিড ১৯-এর মারাত্মক উপসর্গগুলো নিয়েই বেশি মাথা ঘামাই কারণ সেগুলো জীবনঘাতী হতে পারে। ডাক্তাররা যখন কোভিড-১৯-এর মাইল্ড বা মৃদু উপসর্গ নিয়ে কথা বলেন, তখন তারা বোঝান যে রোগীর উপসর্গ আছে কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন হয় না।
তবে এই ‘মাইল্ড’ শ্রেণিবিভাগের ভিতরে কিন্তু অনেকগুলো উপসর্গই পড়ে, যেমন মাথাব্যথা, রক্ত জমাট বেধে যাওয়া, স্বাদ বা গন্ধ না পাওয়া–যেগুলো হুট করেই মারাত্মক রূপ নিতে পারে। কিছু কিছু রোগী জ্বরের কারণে এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে বিছানায় পড়েও থাকতে পারেন।
নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনে আমাদের শ্বসনতন্ত্রের উপরিভাগের সমস্যাবলি বেশি হয়, যেমন নাক দিয়ে পানি পড়া, মাথাব্যথা, দুর্বলতা, হাঁচি, এবং গলাব্যথা। এই উপসর্গগুলোর কোনো ক্রম নেই, ব্যক্তিভেদে কোনোটা আগে এবং পরে হতে পারে। বিজ্ঞানীরা এখনও বের করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন যে কেন এসব লক্ষণ একেকজনের ক্ষেত্রে একেকরকম হচ্ছে।
ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা মনিকার সেইন্ট জন’স হেলথ সেন্টারের ডাক্তার ডেভিড কাটলার-এর মতে, প্রতিটা প্রদাহের তীব্রতা নির্ভর করে দুটো বিষয়ের ওপর:
- একটা হচ্ছে ভাইরাসের উপাদান–শরীরের ভাইরাসের পরিমাণ, যা ভাইরাসের কোনো ভ্যারিয়েন্ট শরীরে প্রবেশ করেছে,
- আক্রান্ত ব্যক্তির উপাদান–ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, জটিল রোগের উপস্থিতি, ভ্যাকসিন গ্রহণ।
তবে এর মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই হলো প্রদাহের তীব্রতার পেছনের সবচেয়ে বড়ো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ভ্যাকসিন গ্রহণ করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, এবং নানান দীর্ঘদিনের রোগের কারণে কমে যেতে পারে। এছাড়াও, বয়স, অপুষ্টি, স্থুলতা, ডায়াবেটিস, এবং আরও অনেকগুলো রোগও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় হেরফের করে কোভিড-১৯-এর তীব্রতা বাড়িয়ে দিতে পারে।
যারা ভ্যাকসিন দিয়েছেন তাদের মধ্যে যারা বুস্টার ডোজ দিয়েছেন তারা যদি সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের সংস্পর্শে আসেনও তাহলে তারা মাইল্ড বা মৃদু কিছু উপসর্গে আক্রান্ত হবেন। তবে এর মানে এই না যা ভাইরাস আর আমাদের জন্য কোনো হুমকি নয়–এদের অনেকেরই কোভিডের কারণে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া লাগতে পারে কিংবা ভাইরাসজনিত অন্য কোনো স্বাস্থ্য সমস্যারও সৃষ্টি করতে পারে। তাই কোভিড-১৯ থেকে নিরাপদ থাকতে মাস্ক পরা, হাত ধোঁয়াসহ সতর্কতায় ঢিল দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।